দেশ সংস্কার ভাবনা: শিক্ষা ও মননশীলতা
দুনিয়াতে স্থানীয় (Local) এবং বৈশ্বিক (Global) – এ দুই প্রেক্ষাপটের সংমিশ্রণ দেখা যায়। নৃবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে ‘গ্লোকাল’ (Glocal) বলা হয় যা বৈশ্বিক ও স্থানীয় অনুঘটকের সমন্বয়ে তৈরিকৃত একটি নিয়ত পরিবর্তনশীল (Fluid) পরিচয় বা সত্ত্বা। এটি একাধারে ব্যক্তির ও সামষ্টিক পরিচয় যে কারণে আমরা আমাদের সমাজটিকে পরিবর্তনশীল (Transitional) সমাজ বলে থাকি।
সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরকার পতন এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করলে এটির গ্লোকাল তাৎপর্য বোঝা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের যে নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে এ থেকে কতগুলো বিষয় প্রতীয়মান হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও জাতীয়তাবাদ
প্রথমত, মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তির মাত্রা থেকে পূর্বে যে ধারণা প্রচলিত ছিল যে Generation Z (Gen-Z) একটি ভীষণ ‘আত্মকেন্দ্রিক’ প্রজন্ম, যাদের হয়ত দেশ নিয়ে তেমন কোন ভাবনা নেই – তা এই আন্দোলনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ভুল প্রতিপন্ন হলো। বরং দেখা গেছে যে এই দেশের অতি সাধারণ মানুষের মধ্যেও কোথাও একটা প্রচন্ডরকম দেশাত্মবোধ ছিল যেটি প্রবল আঘাতের মধ্য দিয়ে পুনরায় জাগ্রত করা গেছে। তবে এটি অবশ্য বৈশ্বিক ধ্যান-ধারণা দ্বারাও কিছুটা প্রভাবিত। এই দাবীর মূল কারণ হলো – এই আন্দোলনের নেপথ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল অন্যতম প্রধান সহায়ক। পাশাপাশি এই আন্দোলনের নির্যাসের সাথে একপ্রকার বৈশ্বিক সংযোগ পরিলক্ষিত হয় যেহেতু এর নেতৃত্বে আছে জেন-জি প্রজন্ম, যারা মনে ও মননে বিশ্বগ্রামের বাসিন্দা।
আমি নিজে বাংলাদেশের একজন নাগরিক এবং সেইসাথে এই প্রজন্মের একজন হিসেবে এটি আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারি যে আমাদের মনে রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা কতখানি প্রবল হয়ে উঠেছিল। এখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নানাভাবে দেশাত্মবোধ বিনির্মাণের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে।
এই আন্দোলনের সর্বোৎকৃষ্ট ফসল এই যে, এই আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের এক প্রকার জড়তা কেটে গেছে। তাই এখন আমরা সকলে বলতে পারি দেশকে কেমন রূপে দেখতে চাই। এটিকে জাতীয়তাবাদ থেকে উদ্ভুত চাহিদাও বলা যেতে পারে। জাতীয়তাবাদের সবথেকে বড় দোষ হলো, এই বোধ কোন নির্দিষ্ট জাতি-গোষ্ঠীর প্রাধান্য দেয়। এখানেই জেনারেশন জি চমৎকার সাধন করেছে। আমাদের এই প্রজন্মকে ধর্ম-বর্ণের ট্রাম্প কার্ড দিয়ে কিংবা পাহাড়-সমতলের বৈষম্যের খেলা খেলে আলাদা করা যাচ্ছে না – যেই কারণে আন্দোলনটি সফলতার মুখ দেখতে পেলো। পাহাড়ের নিপীড়নের ইতিহাসের কিঞ্চিত পরিমাণ হলেও সামনে আসতে পেরেছে এই আন্দোলনের ফসলস্বরূপ। এবং এমন আরো অনেক বৈষম্যের উদাহরণ সামনে আনার মধ্য দিয়ে সকল নাগরিকের অধিকার নিশ্চিতকরণের জন্য আওয়াজ তোলার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
আপাত দৃষ্টিতে অধিকাংশ জনগণকে এই প্রজন্ম এটি বোঝাতে সমর্থ হয়েছে যে দল-মত-ধর্ম-বর্ণ, পাহাড়-সমতল নির্বিশেষে সকলের সম অধিকার নিশ্চিত করা ও সকলের সুন্দর জীবন গড়াই এখন আমাদের দেশ গঠনের মূল লক্ষ্য। একে টেকসই করার জন্যই আমাদের কাজ করতে হবে। বর্তমান বিশ্বে প্রত্যেকে আমরা বৈশ্বিক নাগরিক, তবে তার সাথে নিজের দেশকে বিশ্বের দরবারে উঁচু করে তোলে ধরার যে স্বপ্ন লালিত-পালিত ছিল আমাদের সকলের মনে, এটি শেষ পর্যন্ত খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছে।
বাংলা একসময় বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল। ঐতিহাসিকদের মতে বাংলা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ জনপদ ছিল। আবার একদল গ্রামবাংলার স্বয়ংসম্পূর্ণ চিত্রকে একধরণের অতিরঞ্জন বলেও মনে করেন (খান, ২০২২)। তবে আমি মনে করি অতীতের বাংলাকে অতিরঞ্জন করে হলেও যদি দেশের কল্যাণের স্বার্থে একটি বৃহৎ সংকল্প মানুষের মধ্যে জাগ্রত করা যায়, তাতে দোষের কিছু নেই। আমি এবং আমরা পূর্বের সেই শক্তিশালীরূপেই বাংলাকে দেখতে চাই। অতীতেও দেশে শোষণ ছিল, যার থেকে মুক্ত হতে যুগে যুগে বিপ্লব হয়েছে। অতীতের ভুলগুলোকে শোধরানোর চেষ্টাই এখন আমাদের কাম্য।
বর্তমান প্রেক্ষিতে আরোও বেশি আশাবাদী হওয়ার সুযোগ রয়েছে এই কারণে যে, মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দেয়া এখন অনেক সহজ। যদিও একইসাথে ভুল তথ্য বা গুজব ছড়িয়ে পড়ার একটি বিশাল চ্যালেঞ্জও রয়েছে, যা ইতোমধ্যে পরিলক্ষিত। তবে বিশ্বের সাথে সাধারণ জনতার যোগাযোগ স্থাপনের পথ এখন অনেক সুগম যা মানুষকে ভিন্ন ভাবধারার সাথে পরিচিত হতে ও মনের সংকীর্ণতার উর্ধ্বে ওঠতে সাহায্য করবে।
বাংলার একটি শক্তি হলো এর পাগলপারা, আবেগী জনতা। কিন্তু সেই আবেগের সাথে মস্তিষ্কের শান দেয়া ভীষণ জরুরী, নতুবা আবেগকে ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত করা সহজ। এই দেশে কোনদিন বুদ্ধির বিপ্লব হয়নি। তাই একেবারে সাধারণ জনগণ পর্যন্ত মস্তিষ্ক শানিত করার অস্ত্র পৌঁছে দেয়াই এখন সবথেকে বড় বিপ্লব। এই আকাঙ্ক্ষাকে ‘কোটা না মেধা? মেধা, মেধা’-এই স্লোগানের একটি সাংকেতিক (Symbolic) তাৎপর্য হিসেবে দেখা যেতে পারে। এই জাগরণ হবে আমাদের বুদ্ধির বিপ্লব।
শিক্ষাব্যবস্থা এবং স্থানীয় জ্ঞানের প্রভাব
প্রাচীন বাংলায় যে শিক্ষাব্যবস্থা ছিল তাতে দেখা গেছে শুধুমাত্র উচ্চবর্ণের লোকেরা শিক্ষার সুযোগ পেত, কাজেই সমাজ তাদের দ্বারাই শাসিত হয়েছে। পরবর্তীতে উপনিবেশিক যুগে শিক্ষাকে যে ধারায় নিয়ে যাওয়া হলো তাতে বাংলায় একটি নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি হয়েছিল যাকে ‘বাবু সমাজ’ বলা হয় (মুরশিদ, ২০০৫)। যদিও এটিকে বাংলার রেঁনেসা বলা হয়ে থাকে, কিন্তু ঔপনিবেশিক আমলের সেই শিক্ষাব্যবস্থা এই অঞ্চলের নিজস্ব শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে দাবী করেন উত্তর-ঔপনিবেশিকেরা। তৎপরবর্তীকালে বাংলা আরোও দুইবার স্বাধীন হলো, কিন্তু এর শিক্ষাব্যবস্থাকে কি আমরা গড়ে তোলতে পেরেছি?
রাষ্ট্র সংস্কারে শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে গ্রামসির আলোচনা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে মনে করি। এন্তোনিও গ্রামসিকে নব্য-মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক হিসেবে ধরা হয়, যিনি ইতালীর ফ্যাসিবাদী মুসোলিনি সরকারের শাসনকালে মার্ক্সের তাত্ত্বিক ঘরানা নিয়ে কাজ করেন। বলা বাহুল্য তিনি মুসোলিনির সময়ে জেলে বন্দী ছিলেন। জেলে থাকাকালীন তিনি তাঁর চিঠির মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেন তাঁর চিন্তা-ভাবনা। গ্রামসির মতে অর্থনৈতিক বুনিয়াদের (Base structure) চেয়েও উপরিকাঠামো (Superstructure) বা বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন নিয়ে আসা অধিকতর জরুরী। তাঁর মতে উপরিকাঠামো বা বুদ্ধিবৃত্তিক জায়গাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় ‘হেজেমনি’ বা ‘নৈতিক আধিপত্যের’ মাধ্যমে। আর এই হেজেমনির মধ্য দিয়েই রাষ্ট্র জনসমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যদি এই উপরিকাঠামোতে পরিবর্তন আনা যায় (বিপরীত হেজেমনি তৈরির মধ্য দিয়ে), তবেই একমাত্র সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন সম্ভব।
গ্রামসির মতে এই কার্যসাধনের অন্যতম হাতিয়ার হলো শিক্ষা। তবে তিনি ‘কারিগরি শিক্ষা’-কে সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে এটি শুধুমাত্র পুঁজিবাদী সমাজের জন্য কর্মী তৈরী করে, ‘জৈব বুদ্ধিজীবী’, যারা সমাজে বিপরীত হেজেমনি তৈরী করতে সক্ষম, তা তৈরীতে করতে পারে না (পারভেজ, ২০২১)।
বাংলাদেশে এখন যে ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে তা বাস্তবমুখী বলে দাবী করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত, বাস্তবতা হলো, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার এমনই হাস্যকর অবস্থা যে এটি বুদ্ধিজীবী তৈরী তো দূরের কথা, বরং আংশিক দক্ষ কর্মী তৈরীতেও অক্ষম।
সংস্কারের ধারণা
একটি যথাযথ শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হতে পারে তা নিয়ে রাজা রামমোহন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, জাতীয় কবি নজরুলসহ অনেক মহিষীগণ বহু পূর্বেই আলাপ করেছেন (জিবরান, ২০০৯)। আমরা সেসকল জ্ঞানের সমন্বয়ে একটা নতুন ব্যবস্থা গড়ে তোলতে পারি। এই ব্যাপারে কয়েকটি মতামত তোলে ধরতে চাই।
১. ঔপনিবেশিক ঘরানার শিক্ষা কেন পরিহার্য সেই আলাপে গেলে আলাপ ফুরোবে না। শুধু দুয়েকটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, ঔপনিবেশিক শিক্ষার ফলে আমাদের নিজস্ব অনেক জ্ঞান লুপ্ত হয়ে গেছে। সবুজ বিপ্লবের নামে সকলের খাদ্যাভাব ঘোচানোর বদলে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের বিপর্যয় ঘটে গেছে (ফরহাদ মজহার, ২০১১)। এই ক্ষতি বিবেচনায় স্থানীয় জ্ঞানের পুনরুৎপাদন জরুরী। এখানে চীন, জাপান ইত্যাদি দেশকে উদাহরণ হিসেবে নেয়া যায়। আবার বি-উপনিবেশায়ন (Decolonization) করার মত স্তরে পৌঁছানোও জরুরী। প্রথমে সকলকিছু পড়তে ও জানতে হবে। তারপর সেখান থেকে ভালো-মন্দ বাছাই করে নেয়ার সুযোগ থাকবে।
২. যদি জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় এমন শিক্ষার সত্যিকার অর্থে বাস্তবিক প্রয়োগমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা করা যায়, যেমনটি দেখা গেল এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে, তাহলে হয়তো প্রকৃতরূপে শিক্ষায় মানুষের আগ্রহ বাড়বে, ছাত্রছাত্রীদের জোর করে পড়াতে হবেনা। সেই সাথে আত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণের জন্য কিশোর বয়সে ব্যাপক গল্প-উপন্যাস পড়ায় উৎসাহিত করতে হবে। এক্ষেত্রেও দরকার কাঠামোগত পরিবর্তন, তা ছাড়া বই পড়ার অভ্যাস তৈরি অসম্ভব। শিশুমনের জিজ্ঞাসাকে নিবারণ করার মত পর্যাপ্ত বই থাকতে হবে। পরিবার ও শিক্ষক এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা জাগলে একজন ছাত্র যেন সেটির একদম গভীরে যেতে পারে তার সুব্যবস্থা থাকবে প্রিন্ট ও ডিজিটাল মিডিয়ার সমন্বয়ে। শিক্ষকরা সরাসরি এটি তত্ত্বাবধান করবেন।
৩. গুরুগৃহভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা এই অঞ্চলে একটি প্রাচীনপন্থা। জীবনের যাবতীয় সকল ধরণের শিক্ষালাভের জন্য পরিবার থেকে পৃথক বাসস্থানে অবস্থান করে সম্পূর্ণ শিক্ষাজীবন শেষ করে ছাত্ররা নিজ পরিবারে ফেরত আসবে – এটিই ছিল এই পদ্ধতির মূলকথা। বোর্ডিং বিদ্যালয়গুলো এই ব্যবস্থার সাথে আংশিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। দীর্ঘকালব্যাপী গুরুগৃহে অবস্থান করে শিক্ষালাভের ব্যবস্থা করা হয়তো কাঠামোগত দুর্বলতাজনিত কারণে সম্ভব নয়, তবে এই ব্যবস্থাটির ভিন্ন সংস্করণ বিবেচনা করা যেতে পারে। এই ব্যবস্থায় একাগ্রতা বৃদ্ধির সুযোগ অনেক বেড়ে যায়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, সরাসরি শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে থেকে তাঁর ডেস্কে বসে দিনব্যাপী গবেষণাকাজ করা, বাড়ির কাজভিত্তিক পাঠদান প্রক্রিয়ার চেয়ে অনেক বেশি ফলপ্রসূ।
৪. বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের আউটকাম বেইসড লার্নিং (যার কার্যত উদ্দেশ্য হলো কিছু শ্রমিক তৈরি করা) বাদ দিতে হবে। তার পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান উৎপাদনকে প্রাধান্য দিতে হবে। যে জ্ঞান শুধুমাত্র ‘চাকুরীপ্রত্যাশী’ তৈরি করবে না, বরং আলোকিত মানুষ তৈরি করবে যারা নিজের দেশ ও সম্পূর্ণ মানবজাতির কল্যাণে কাজ করতে পারে। ‘দুনিয়ায় সম্পদ সীমিত এবং প্রতিযোগিতা অসীম’-এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিজেদের দেখতে ও জানতে হবে আরোও বৃহত্তরভাবে। ‘সকলে মিলে অসীম তৈরি করা যায় জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে’-এই সত্য চাষ করার ক্ষেত্র হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
৫. শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করতে হবে। এটি সবশেষে উল্লেখ করলেও এর গুরুত্ব সর্বাধিক। কারণ অর্থ ব্যতীত উপরের কোনটিই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। আবার অর্থনৈতিক দিকটির সাথেই জড়িয়ে আছে উৎপাদনশীল জাতি গঠনের বিষয়টি। এখানে উৎপাদনশীল বলতে কেবল ‘কর্মী’ উৎপাদন নয়, বরং কর্মী এবং বুদ্ধিজীবীর সমন্বয় প্রাধান্য পাচ্ছে।
সর্বোপরি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের এই যুগে মানবজাতি সহসাই বড় চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে – আর তাই এই বিষয় মাথায় রেখে বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থে জ্ঞানের প্রবাহ উন্মুক্ত রাখতে হবে। বৈশ্বিক যুগে স্থানিক যে তরলতা (Fluidity) রয়েছে, এই প্রজন্মের মন ও মননে সেটিকে মাথায় রেখে শিক্ষাব্যবস্থা পুনরায় সাজাতে হবে। সার্বিক সমন্বয়সাধন এই যুগে অপরিহার্য। জয় হোক সত্যের, জয় হোক প্রজ্ঞার, জয় হোক মানবতার।
***লেখাটিতে বিভিন্ন স্থানে ‘রাষ্ট্র’ না বলে ‘দেশ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। ‘দেশ’ বলতে একটি ভাবাবেগমণ্ডিত সত্ত্বাকে বোঝায় যেটি মানুষের মনের মধ্যে থাকে, সেই দেশকেই সংস্কারের কথা এখানে বোঝাতে চেয়েছি। উক্ত লেখায় ‘দেশ’ অর্থ ভৌগলিক স্থান নয়, এটি একাধারে দৃশ্যমান রাষ্ট্রযন্ত্র ও ভাবাদর্শের স্থান (Space)।
বই পরামর্শ
১. আমিনুল ইসলাম ভুইয়া অনুবাদিত, আকবর আলি খানের লেখা ‘বাংলাদেশের সত্তার অন্বেষা’ (২০২২)।
২. গোলাম মুরশিদের লেখা ‘হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি’ (২০০৫)।
৩. আলতাফ পারভেজের লেখা ‘গ্রামসি ও তাঁর রাষ্ট্রচিন্তা’ (২০২১)।
৪. শোয়াইব জিবরান সম্পাদিত প্রবন্ধ সংকলন ‘শিক্ষার শতবছর: রামমোহন থেকে নজরুল’ (২০০৯)।
৫. ফকরুল চৌধুরী সম্পাদিত ‘উপনিবেশবাদ ও উত্তর-ঔপনিবেশিক পাঠ’ (২০১১) গ্রন্থ হতে নেয়া ফরহাদ মজহারের প্রবন্ধ ‘বিজ্ঞান ও কৃৎকৌশলের কুসংস্কার ও আমাদের ঔপনিবেশিক টানাপোড়েন।