সুস্বাস্থ্যের রহস্য

প্রতিদিন আমরা কী খাই? 

অনেকেই ইদানীং কিটো ডায়েট, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং সহ নানান ধরণের ডায়েটের সাথে পরিচিত। মজার ব্যপার হলো আমরা যারা ওজন কমাতে চাই অনেক উৎসাহ নিয়ে শুরু করি ডায়েট করা কিন্তু খুব দ্রুতই উৎসাহ হারিয়ে যায়।

ফলে দেখা যায় আমরা একটা চক্রের মধ্যেই আটকে থাকি। 

লাভের গুড় পিঁপড়ায় খায় 

প্রথমে আসা যাক আপনার ওজন কমানোর মোটিভেশন কী এই বিষয়ে। 

আমরা প্রথমেই একটা উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে ওজন কমানোর জার্নি শুরু করি যে খুব দ্রুতই আমরা কাঙ্ক্ষিত শরীরের গড়ন অর্জন করে ফেলবো, ঝরিয়ে ফেলবো বছর বছর ধরে জমতে থাকা মেদ। এই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জার্নি শুরুর পর যখন দেখা যায় ডায়েট, ব্যয়াম সবকিছু করেও নিজের শরীরটা ঠিক কাঙ্ক্ষিত আকার পাচ্ছেনা তখনই আমরা হতাশায় নিমজ্জিত হই এতে করে বাড়ে স্ট্রেস হরমোন যা কিনা আবার ওজন কমানোর বদলে আরোও খানিকটা বাড়িয়ে দেয়। ফলে আপনার সমস্ত লাভের গুড় পিঁপড়াই খেয়ে ফেলে!

আমার নিজের ওজন কমানোর পথের গল্পটাও কিছুটা এমনই। অনেক ঘাটাঘাটির পর আমি বেশ কিছু বিষয় শিখতে পেরেছি ওজন কমানোর ব্যাপারে। এই আর্টিকেলে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে এগুলো তোলে ধরছি

  • মাথা থেকে ওজন কমানোর ভূত ঝেড়ে ফেলা: শোনতে হয়তো বেখাপ্পা লাগছে, যদি আমি ওজন কমানোর চেষ্টাই না করি তাহলে ওজন কমাবো কী করে! যখন আমরা কোনো বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করি এটির কাঙ্ক্ষিতভাবে না হওয়া আমাদের মনে চাপের সৃষ্টি করে আর এতে করে মনের বিষন্নতা বাড়ে, ঘুমের ঘাটতি দেখা দেয় পূর্বেই উল্লেখ করেছি এতে স্ট্রেস হরমোম তৈরি হয় যা ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক, তার উপর আবার মনের বিষন্নতা কাটানোর জন্য আমাদের শরীরে শর্করার অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হয়; যেমন আপনার মন খারাপ হলে হয়তো এক কাপ চা বা কফি বা কিছু মোখরোচক খাবার খাওয়ার জন্য ক্র্যাভিং তৈরি হয়। ওজন কমাবো অথবা “আমি ডায়েট করছি” এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলাই শ্রেয়।
  • ক্ষুধা লাগার পরে খাওয়া: আমরা ক্ষুধা না থাকলেও খাই। এটি বাদ দিতে হবে। যখন ক্ষুধা লাগবে তখনই খাওয়ার অভ্যাস করলে ওজন না কমলেও ওজন বাড়াটা বন্ধ হবে কেননা আপনার শরীরের বর্তমান ওজন ধরে রাখার জন্য যতটুকু ক্যালোরি প্রয়োজন তার অতিরিক্ত ক্যালোরি তখন যোগ হবেনা।
  • পানির কোন বিকল্প নাই: পানি পানের উপকারিতা নতুন করে বলার কিছু নেই। এটি ত্বক, চুল, অভ্যন্তরীণ শারীরিক ক্রিয়া সকলকিছু ভালো রাখে। পানি বেশি করে পান করার ফলে পেট ভরা থাকবে, শরীরের দূষিত পদার্থগুলো বেরিয়ে যাবে এবং বারবার প্রস্রাবে যাওয়া-আসার ফলে যারা ডেস্কজব করেন তাদের কিছুটা শারীরিক চলাচলও হবে। যদি সকালে খালি পেটে গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন এতে করেও ফলাফল পেতে পারেন যদিও এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয় তবে অনেকের ক্ষেত্রেই এটি কাজে দিয়েছে বলে জানা যায়। তবে যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা এটি এড়িয়ে চলাই ভালো। তারা শুধু গরম পানি খেতে পারেন এতে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় যা সকালবেলা শরীরকে চাঙ্গা করতে অনেকটাই কসর্যকরী এবং এতে করেও পেট ক্ষানিকক্ষণ ভরা থাকে।
  • তিন মন্ত্র: সবজি আধাপেট, প্রোটিন কোয়ার্টার ও কার্বোহাইড্রেট কোয়ার্টার পেট- এভাবে যদি খাওয়া যায় তাহলে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা কঠিন হবেনা। আপনি নিজের খাদ্যাভ্যাসের সাথে মিলিয়ে দেখবেন এই অনুপাত ঠিক আছে কিনা, যদি কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি থাকে খাবারে সেটা প্রোটিন ও সবজি দিয়ে রিপ্লেস করতে পারেন। রান্নায় যাতে তেল পরিমিতভাবে ব্যবহার করা হয় এটি নিশ্চিত করলে ওজন কমার পাশাপাশি সবসময় ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকতে বাধ্য।
  • হাসিখুশি থাকার জন্য শরীর নড়াচড়া: ব্যয়াম করার চাইতে পায়ে হেঁটে বেড়ানো বা নিজের খেয়ালখুশি নাচ অথবা সাঁতার কাটা এইগুলো অনেকবেশি আনন্দদায়ক হয়ে থাকে। এবং একই বিষয় প্রতিদিন না করে পরিবর্তন করে করে করা যেতে পারে। কোনোদিন কয়েক কিলোমিটার হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে বেড়িয়ে আসতে পারেন। আবার এত সময় না থাকলে ঘরে বসে নিজের পছন্দের গানে ১০-১৫ মিনিট নেচেও ফেলতে পারেন। এবং যেকোন একটি বা দু’টি শারীরিক কসরত বেছে নিতে পারেন যেটি আপনার সবচেয়ে সহজ মনে হয়, এটি হতে পারে স্কোয়াট, লাফ দেয়া অথবা শুধু হাত পা কোমর ঘোরানো। এই সহজ কসরতটি সারাদিনে অসংখ্যবার করে নিতে পারেন কাজের ফাঁকে। এটি শরীরকে সচল রাখতে সাহায্য করবে। 
  • গ্রিনটির জাদু: দিনের শেষে এক কাপ গ্রিনটি সাথে রাখুন। এটি মন সতেজ করবে এবং মনে একটা প্রশান্তি এনে দিবে যে আপনি একটা “ভালো” কিছু খাচ্ছেন। 

আমরা মুখরোচক খাবারের লোভ থেকে নিজেকে সংযত করতে ব্যর্থ হই প্রায়ই। এটি খুব স্বাভাবিক, এটি নিয়ে অপরাধবোধে ভোগার প্রয়োজন নেই, বরং একটু নেচে ফেলুন। প্রাকৃতিক খাবার খান ভরপুর, মন খোলে ও প্রাণখোলে বাঁচুন। ওজন কমানোর “ডায়েটে” না নেমে বরং স্বাস্থ্যকরভাবে খাওয়ার ও বাঁচার অভ্যাস করে ফেলুন।